Epaper_Logo
প্রিন্টের তারিখঃ Dec 19, 2025 প্রকাশের তারিখঃ Dec 18, 2025

নিরাপত্তা চেয়ে জিডির এক মাস পর এনসিপি নেত্রী রুমীর রহস্যজনক মৃত্যু

News Image

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিজয়ের আলো।
সাইবার বুলিং ও হুমকির অভিযোগ, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন:

রাজধানীর হাজারীবাগে একটি বেসরকারি ছাত্রী হোস্টেল থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী জান্নাত আরা রুমীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে। মৃত্যুর প্রায় এক মাস আগে নিরাপত্তা চেয়ে তিনি ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে জিগাতলা পুরাতন কাঁচাবাজার সড়ক এলাকার ওই হোস্টেল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, জিডির পর বিষয়টি তদন্তাধীন ছিল এবং অভিযুক্তদের শনাক্তের চেষ্টা চলছিল। তবে এনসিপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, জিডির পরও হুমকি বন্ধ হয়নি এবং কার্যকর পুলিশি সহায়তা পাওয়া যায়নি। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জান্নাত আরা রুমী এনসিপির ধানমন্ডি থানা শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী ছিলেন। গত ১৩ নভেম্বর নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের হরতাল চলাকালে ধানমন্ডি-৩২ এলাকায় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই রুমী দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নম্বর থেকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকির শিকার হন বলে দাবি এনসিপি নেতাদের। এমনকি তার পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। চরম নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে ১৩ নভেম্বর রাতে তিনি থানায় জিডি করেন। এনসিপির এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এসব হুমকির কারণে রুমী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন এবং একপর্যায়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নিচ্ছিলেন। যদিও মৃত্যুর কয়েক দিন আগে তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। হোস্টেল কর্তৃপক্ষ জানায়, রুমী গত ২৩ নভেম্বর ওই হোস্টেলে একটি কক্ষ ভাড়া নেন এবং একাই থাকতেন। ঘটনার রাতে হোস্টেলের গৃহকর্মী রাজিয়া বেগম প্রথমে বিষয়টি টের পান। পরে হোস্টেলের মালিকের পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে খবর দেন। হোস্টেলের মালিকের জামাতা আব্দুল মান্নান মৃধা জানান, তিনিই প্রথম মোবাইল ফোনে থানাকে বিষয়টি অবহিত করেন। পুলিশ এসে পাঁচতলার কক্ষ থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। 

পুলিশের দাবি, প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে। এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা দাবি করেছেন, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ধারাবাহিক সাইবার বুলিং, ধর্ষণ ও হত্যার হুমকির কারণেই রুমী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মরদেহ দেখার পর সাংবাদিকদের বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা রুমীর মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।” তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, ময়নাতদন্ত ও পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ হয়, সে বিষয়ে দল সতর্ক নজর রাখবে। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এটি আত্মহত্যা নাকি অন্য কোনো অপরাধ—তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এদিকে রুমীর মৃত্যু ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।